নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে একটি হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে সফল হয়েছে পুলিশ। মাত্র ২৫ দিনে রহস্য উন্মোচিত করাসহ খুনিদের গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হয়েছে। অটোরিকশাচালক যুবক রুম্মান জোমাদ্দারকে (২২) বরিশাল শহরে থেকে গত ২৯ জুন অপহরণ করে তারই বন্ধু আসলাম ও স্ত্রী খাদিজা আক্তার। পরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙামাটি নদীতীরে জবাই করে এবং লাশটির পেট কেটে ওই নদীতে ফেলে দেয়। এসময় তারা রুম্মানের অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী-স্ত্রী পুলিশের কাছে অটোরিকশাচালককে জবাই করে হত্যা বিষয়টি স্বীকার করেছে। এবং আদালতেও ১৬৪ ধারায় অনুরুপ বয়ান দিয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য শুক্রবার বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করে।
পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়- বরিশাল শহরের চাঁদমারী এলাকা থেকে গত ২৯ জুন বন্ধু আসলাম ও তার স্ত্রী খাদিজাকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যাওয়ার কথা বলে রুম্মানের অটোরিকশায় ওঠে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কৌশলে তাকে অটোরিকশাসমেত বাকেরগঞ্জের রাঙামাটি নদীতীরে নিয়ে যায়। এবং সেখানে পৌঁছেই ভাড়ায়চালিত অটোরিকশাটি তাদের কাছে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে সম্মত না হওয়ায় যুবক রুম্মানকে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।
পুলিশ জানায়, অটোরিকশাটি মালিক মাহিদুল ইসলামের সাথে আলোচনা ব্যতিত বিক্রি অসম্ভব জানানোর সাথে সাথে রুম্মানের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে বন্ধু আসলাম। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসলাম দ্বিতীয় দফার রুম্মানের গলায় ছুরি বসায় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরে লাশটি পানিতে ভেসে উঠলে আসলাম পানিতে নামে এবং পেট কেটে ডুবিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রুম্মানের অটোরিকশাটি নিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায়। যুবকের লাশটি এখন পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
এদিকে যুবকের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তার আপন খালা সুমি বেগম দুদিন পরে ১ জুলাই বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এবং একই দিনে অটোরিকশা মালিক মাহিদুল ইসলামও একটি চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ করেন।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বরিশালটাইমসকে জানান, ছিনতাইয়ের পরে অটোরিকশাটির রঙ বদলে দেয় স্বামী-স্ত্রী। অভিযোগের সূত্র ধরে ১০ জুলাই প্রথমে ওই অটোরিকশাটি বাকেরগঞ্জে সাড়র্শী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে ওই উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের বাকরদা গ্রামের খালু শ্বশুর আক্কাস খানের বাড়ি থেকে আসলাম ও তার স্ত্রী খাদিজাকে গ্রেপ্তার করেন। তাদেরকে আদালতের নির্দেশে রিমান্ড হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক নাটকীয়তা শেষে স্বীকার করে অটোচালক রুম্মানকে বাকেরগঞ্জের রাঙামাটি নদীতীরে গলাকেটে খুন করে। পরে পেট কেটে লাশটি নদীতে তলিয়ে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে আসে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের তারা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। সেই ছুরিটিও আক্কাস খানের বাড়ি থেকে দুদিন পূর্বে অর্থাৎ বুধবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক স্বামী-স্ত্রী কারাগারে প্রেরণ করেন। বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, খুনি আসলামের দেওয়া তথ্যানুসারে রাঙামাটি নদীতে রুম্মানের লাশটি উদ্ধার এক দফা তল্লাশি চালানো হলেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন ডুবুরি নিয়ে বড় ধরনের উদ্ধার অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।’
Leave a Reply